বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে আমাদের গর্ব
দেশের পোশাক খাতে এমন অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেগুলো শ্রম আইনে নির্ধারিত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার পরও শ্রমিকদের বাড়তি আরো অনেক কিছু দিয়ে থাকে। যেকোনো কারখানার জন্যই এসব পদক্ষেপ উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। এখানে সে রকম ১০টি নজির তুলে ধরা হলো।জাতিসংঘে বোর্ড সদস্য বাংলাদেশের ভিয়েল্লাটেক্স গ্রুপ ইউনাইটেড নেশনস ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (ইউএনডিপি) গ্রিন ইন্ডাস্ট্রি ইনিশিয়েটিভের অ্যাডভাইজরি বোর্ডের সদস্য। ওই বোর্ডে মাইক্রোসফটসহ বিশ্বের চারটি কম্পানি আছে। ভিয়েল্লাটেক্স গ্রুপের শ্রমিকদের খাবার পানি প্রতি ছয় মাসে একবার করে পরীক্ষা করা হয় আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা প্রতিষ্ঠান-আইসিডিডিআরবির মাধ্যমে। কারখানার স্যানিটেশন ব্যবস্থার মান রক্ষা করা হয় আইএসওর মান অনুযায়ী।
কম দামে নিত্যপণ্য
ডিবিএল গ্রুপ ২০০৮ সালে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার পর 'বন্ধন' নামের একটি ন্যায্যমূল্যের দোকান খুলে কারখানার শ্রমিকদের কাছে বাজারের চেয়ে কম দামে পণ্য বিক্রি শুরু করে। কারখানা প্রাঙ্গণে অবস্থিত ওই দোকান থেকে শ্রমিকরা ২৪০ ধরনের পণ্য কম দামে কিনতে পারেন।
কর্তৃপক্ষ বেশির ভাগ পণ্য সরাসরি উৎপাদকদের কাছ থেকে কারখানার দামে কেনে এবং সেই দামেই শ্রমিকদের কাছে বিক্রি করে। দোকানের খরচ বহন করা হয় প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে। এখান থেকে বাকিতে পণ্য নেওয়ারও ব্যবস্থা আছে।
বাড়তি মজুরি
ফকির অ্যাপারেলস লিমিটেড বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শ্রমিকদের জন্য ঘোষিত ন্যূনতম মজুরির চেয়ে বেশি হারে মজুরি দেয়। বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের মজুরির স্তর পাঁচ হাজার টাকা। কারখানাটির একটি শ্রমিক প্রশিক্ষণকেন্দ্র আছে। যেখানে প্রশিক্ষিত শ্রমিকদের শিক্ষানবিশকালে দুই হাজার ৫০০ টাকার বদলে তিন হাজার টাকা মজুরি দেওয়া হয়। এ ছাড়া এমন আরো অনেক কারখানা আছে, যেগুলো শ্রমিকদের বাড়তি মজুরি দেয়।
নারী স্বাস্থ্যে নজর
নারী শ্রমিকদের স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিয়ে ভর্তুকি মূল্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন সরবরাহ করছে ব্যাবিলন গ্রুপ। প্রতি প্যাকেট ন্যাপকিন বাজার থেকে কিনতে গেলে লাগে ৫৬ টাকা। ব্যাবিলন তাদের কারখানায় উৎপাদিত ন্যাপকিন বিক্রি করে ৩০ টাকায়।
মায়ের পুষ্টি
কোনো নারী শ্রমিক সন্তানসম্ভবা হলে তাঁকে দৈনিক ২৫ টাকা করে আলাদা ভাতা দেয় ইপিলিয়ন গ্রুপ, যাতে তিনি একটি ডিম ও দুধ খেতে পারেন। ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর শিশুটির জন্য একটি উপহারও পাঠানো হয় প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে। ওই উপহারের আর্থিক মূল্য দেড় হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
প্রতিবন্ধীদের কর্মসংস্থান
ইন্টারস্টফ অ্যাপারেলস শারীরিক প্রতিবন্ধীদের সাভারের সিআরপির (পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসনকেন্দ্র) মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দিয়ে কারখানায় নিয়োগ দেয়। প্রশিক্ষণের পুরো ব্যয় বহন করা হয় কারখানাটির পক্ষ থেকে। এ পর্যন্ত ৫০ জন প্রতিবন্ধীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে কারখানায় নিয়োগ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
নতুনদের প্রশিক্ষণ
ঈশ্বরদী ইপিজেডের কারখানা ভিনটেজ ডেনিম স্টুডিও (ভিডিএস) ওই এলাকায় নতুনদের প্রশিক্ষণ দিয়ে কারখানায় নিয়োগ দেয়। স্থানীয় নারীরা বাড়িতে থেকে কাজ করার সুযোগ পান। ফলে তাঁদের আয়ের বড় অংশ সঞ্চয় হয়। রাজধানী বা অন্য এলাকায় ভাড়া থেকে কাজ করা শ্রমিকরা যেটি পারেন না।
স্বাস্থ্য সুরক্ষা
সায়হাম নিট কম্পোজিটের সব কর্মীর জন্য হেলথ কার্ড আছে। প্রতিবছর কর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয় কারখানার পক্ষ থেকে। প্রতিষ্ঠানটির একটি হেলথ কেয়ার সেন্টার আছে। কারখানায় নিয়মিত পেশাগত ঝুঁকির বিষয়টি পরীক্ষা করা হয়, যাতে উচ্চমাত্রায় নিরাপত্তা বজায় রাখা সম্ভব হয়।
আবাসন
এনভয় গ্রুপের কারখানা এনভয় টেক্সটাইলে শ্রমিকরা আবাসন সুবিধা পান। কারখানা প্রাঙ্গণে তাঁদের জন্য ডরমিটরি আছে। প্রায় ৮০০ কর্মী ওই ডরমিটরিতে বসবাস করেন। এর মধ্যে ৭২৫ জন শ্রমিক। কারখানাটি ময়মনসিংহের ভালুকায় অবস্থিত।
সকাল-দুপুরের খাবার
সকাল ও দুপুরে শ্রমিকদের বিনা মূল্যে খাবার দেওয়ার রীতি আছে দেশের বহু গার্মেন্ট কারখানায়। অনেক কারখানা খাবার তৈরি করে দেওয়ার বদলে সমপরিমাণ টাকা ভাতা হিসেবে দিয়ে থাকে। আবার অনেক কারখানা ভর্তুকি মূল্যে খাবার সরবরাহ করে। [সুত্র : কালের কণ্ঠ]
No Comment to " বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে আমাদের গর্ব "