বিশ্বের ১ নম্বর পোশাক কারখানা বাংলাদেশের ঈশ্বরদীর ভিনটেজ ডেনিমই
World's number One Clothing Factory in Bangladesh |
ইউএসজিবিসি যে লিড সনদ দেয় তার পূর্ণ রূপ 'লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন'। ইজারা নেওয়া ৯.২ একর জমিতে সর্বোচ্চ মান বজায় রেখে গড়ে তোলা কারখানাটিতে স্থায়ী বিনিয়োগের পরিমাণ ১৭ মিলিয়ন ডলারের বেশি। টাকার অঙ্কে যা ১৪০ কোটি টাকার মতো। বাংলাদেশে লিড সনদের গোল্ড বা অন্য মর্যাদা পাওয়া আরো তিন-চারটি কারখানা আছে। তবে সর্বোচ্চ প্লাটিনাম মর্যাদা পেয়েছে কেবল ভিনটেজ ডেনিমই।
প্লাটিনাম মর্যাদা পাওয়া অন্য দুটি কারখানা শ্রীলঙ্কায় অবস্থিত। তবে ওই দুটি কারখানা থেকেও ভিনটেজ ডেনিম এগিয়ে। কারণ ভিনটেজ ডেনিম মোট ১১০ নম্বরের মধ্যে ৯০ নম্বর পেয়েছে। এত বেশি নম্বর পেয়ে লিড সনদ পাওয়ার নজির নেই অন্য কোনো পোশাক কারখানার।
ভিনটেজ ডেনিমের ৯.২ একর জমির ৪০ শতাংশ ফাঁকা। কারখানার ভবন একতলা। স্টিল কাঠামোর ভবনটি এমন উপকরণে তৈরি যেখানে তাপ শোষণ না করে বিকিরণ করে দেয়। ফলে কারখানার ভেতরে অপেক্ষাকৃত শীতল থাকে। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের ব্যবহার করে কারখানার ভেতরে উপযোগী তাপমাত্রা বজায় রাখা যায়। কারখানাটির ভবন এমনভাবে তৈরি হয়েছে যে ধসে পড়ার কোনো আশঙ্কা নেই, আবার আগুন লাগলে শ্রমিকরা দৌড়ে বাইরে চলে যেতে পারবেন। এতে জীবনের ক্ষতির আশঙ্কা খুব কম।
ভিনটেজ ডেমিন স্টুডিওর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শ্রীলঙ্কার নাগরিক দুমিন্দা মানগালা বলেন, 'বাংলাদেশের পোশাক খাতকে সামনের ধাপে নিয়ে যাওয়া আমাদের উদ্দেশ্য। এ জন্য দীর্ঘদিনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পরিকল্পনার পর আমরা কারখানাটি গড়েছি।' তিনি জানান, ভিনটেজ ডেনিম থেকে পোশাক নিয়ে নামি ব্র্যান্ডগুলো সেখানে 'গ্রিন ট্যাগ' ব্যবহার করতে পারবে। ওই ট্যাগের মাধ্যমে বোঝাবে যে এ পোশাক একটি পরিবেশবান্ধব গ্রিন কারখানায় তৈরি হয়েছে।
কারখানাটিতে যেসব ইট ব্যবহার করা হয়েছে, তা কম ধোঁয়া ওঠানো ইটভাটা থেকে কেনা। রং করার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে 'লো ভোলাটিক অর্গানিক কেমিক্যাল', যা পরিবেশবান্ধব। কারখানার ভেতরে শ্রমিকদের জন্য একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রা সার্বক্ষণিক বজায় রাখা হয়। যেকোনো অবস্থান থেকে শ্রমিকরা বাইরের পরিবেশ দেখে কাজ করতে পারেন। কারখানার কর্তৃপক্ষ মনে করে, এতে শ্রমিকদের মন ভালো থাকে, কাজে ক্লান্তি আসে না। শ্রমিকের মন ভালো রাখার জন্য গানের ব্যবস্থাও আছে। কারখানার ভেতরে কাজ করার সময় শ্রমিকদের পছন্দের গান বাজানো হয়, যা শুনতে শুনতে কাজ করেন শ্রমিকরা।
সকালে কাজ শুরুর আগে শ্রমিকদের জাতীয় সংগীত বাজিয়ে শোনানো হয়। কিছু ব্যায়ামও করানো হয়, যাতে তাঁদের শরীরে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে। তাঁদের অধিকার ও দায়িত্ব, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও নারী স্বাস্থ্যের বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শও দেওয়া হয়।
পোশাক কারখানায় আলোর ব্যবহার যেকোনো কারখানার চেয়ে বেশি। দিনের বেলাও সারি সারি জ্বলতে থাকা টিউব লাইটের মধ্যে কাজ করেন শ্রমিকরা। কিন্তু ভিনটেজ ডেনিম স্টুডিওতে দিনের বেলা শ্রমিকের মাথার ওপর কোনো বাতি জ্বলে না। দিনের আলো ব্যবহার করেই তাঁরা কাজ করেন। তবে সুই-সুতার সেলাইয়ে একটু বেশি আলো দরকার। এ জন্য সেলাই মেশিনের সঙ্গে আছে একটি ছোট বাতি, যেটি শুধু মেশিনের সুইয়ের ওপর আলো ফেলে। শুধু প্রয়োজন যেখানে, সেখানেই হচ্ছে আলোর ব্যবহার।
বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় সোলার প্যানেল স্থাপন করেছে কারখানাটি; যার মাধ্যমে বছরে প্রায় এক লাখ ৫০ হাজার কিলোওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যায়। কারখানার মেশিন চালনা ও অন্যান্য প্রয়োজনে যে বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয় তার ১৩ শতাংশ আসে সূর্যের আলো থেকে।
কারখানাটি বর্জ্য পরিশোধনের জন্য যে প্রযুক্তি ব্যবহার করছে তাতে প্রতি ঘণ্টায় ৭০ হাজার লিটার পানি পরিশোধন করা যায়। কারখানায় ব্যবহার করা পানি পরিশোধন করে আবার ব্যবহার উপযোগী করা হয়। এ ছাড়া বর্জ্য পরিশোধন করার পর যে অবশেষ থাকে তা একটি ইটের ভাটাকে নিজেদের পরিবহন খরচে সরবরাহ করে কারখানা কর্তৃপক্ষ। ইটভাটার মালিক ইট তৈরিতে তা পুড়িয়ে ফেলেন। পরিবেশদূষণ কম হওয়ার জন্য এগুলো ইটভাটাকে দিয়ে দেওয়া হয়।
কারখানাটি পানি বিশুদ্ধ করার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মান অনুসরণ করে। বিশুদ্ধ করা পানি লেবু অথবা স্যালাইন দিয়ে কারখানার শ্রমিকদের দেওয়া হয় তাঁদের ক্লান্তি দূর করার জন্য। প্রতিষ্ঠানটি নানাভাবে ৪৬ শতাংশ পানি সাশ্রয় করে।
ভিনটেজ ডেনিম স্টুডিওতে প্রায় আড়াই হাজার শ্রমিক কাজ করেন। কারখানাটি প্রায় সব শ্রমিক নিয়োগ দিয়েছে আশপাশের এলাকার নারী-পুরুষদের প্রশিক্ষণ দিয়ে। শ্রমিকরা আশপাশের জেলা-উপজেলা থেকে মাসিক চুক্তির পরিবহনে কারখানায় আসেন। তাঁদের মজুরি দেওয়া হয় ইপিজেডের ঘোষিত নীতিমালা অনুযায়ী। একজন অপারেটর মাসে সাত থেকে আট হাজার টাকা আয় করেন, যার বড় অংশই থেকে যায় সঞ্চয় হিসেবে। কারণ শ্রমিকরা নিজের বাড়িতে থাকেন বলে বাসা ভাড়ার প্রয়োজন হয় না। নিজেদের জমির ধান, বাড়ির আঙিনার সবজি, পুকুরের মাছ খেয়ে তাঁদের স্বাস্থ্যও ভালো থাকে।
ইপিজেডগুলোতে বাংলাদেশের শ্রম আইন কার্যকর নয়। সেখানে নিজস্ব নিয়মকানুন আছে। ওই নিয়মকানুনে শ্রমিকদের যেসব সুবিধা দেওয়া হয়, তার চেয়েও বেশি সুবিধা দেয় ভিনটেজ ডেনিম। কারখানাটিতে নিয়মিত কাজ করলে শ্রমিকরা ৪০০ টাকা হাজিরা বোনাস পান। ১১ দিনের জায়গায় শ্রমিকদের বছরে ১৫ দিন উৎসব ছুটি দেওয়া হয়। অসুস্থ থাকার সময় অর্ধেক বেতনের বদলে পূর্ণ বেতন দেওয়া হয়। চাকরির বয়স ১৮০ দিন না হলেও শ্রমিকদের বোনাস দেওয়া হয় উৎসবের সময়। নববর্ষে শ্রমিকদের এবং সন্তান হলে বাবা-মাকে উপহার দেওয়া হয় কারখানার পক্ষ থেকে। মাঝেমধ্যে জন্মদিনের উপহারও পান শ্রমিকরা।[সুত্র : কালের কণ্ঠ]
Tag : World's number One Clothing factory in Bangladesh which name is VINTAGE DENIM STUDIO Ltd. [1] [2]
No Comment to " বিশ্বের ১ নম্বর পোশাক কারখানা বাংলাদেশের ঈশ্বরদীর ভিনটেজ ডেনিমই "