গল্প - নেশা
আমার পছন্দের মানুষটিকে বহু চেষ্টা তদবির করে বিয়ে করেছি। তবে বন্ধু মহল বলে থাকে আমি নাকি ‘ইয়ে’ করে বিয়ে করেছি! আসলে ইয়ে টিয়ে কিছুই করিনি শুধু চোখে চোখে রেখেছিলাম যাতে আমার আকাঙ্খার ধন হাত ছাড়া না হয়ে যায়। এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রেম করে যারা বিয়ে করে তাদের বিয়ে টিকে কম! যদিওবা বংশ মর্যাদা বা ইজ্জতের ভয়ে সংসার নামক বিস্ময়কর ঘরটি টিকে যায় তবে অশান্তির দাবানল নাকি সারাক্ষণ ঘরটিকে পুড়তে থাকে।এর ব্যতিক্রম আছে। গবেষকরা বলেছেন, বেশীরভাগ প্রেমের বিয়ে তিন বছরের মধ্যে গুটিয়ে যায় আর যদি কোনোভাবে পাঁচ বছর পেরোতে পারে তাহলে ভয় নেই, সংসার টিকে যাবে
প্রায় এক যুগ হতে চললো আমরা জুটি বেধেছি। সুখের ঊর্মিমালা যেমন আমাদের সংসারের বেলাভূমে আছড়ে পড়েছে তেমনি দুখের বিষাক্ত অনল কম ঝাপটা দেয় নি। আর অভাব তো বাংলাদেশের দূর্নীতির মতো আমাদের পিছু ছাড়ছে না তথাপি এক মুহুর্তের জন্যও ‘অশান্তি’ আমাদের ছোট্ট সংসারে হানা দিতে পারে নি। অভাবের সংসারে এতো সুখ আর এতো হাসি দেখে বন্ধুদের অনেকে বলে থাকে, তোদের দু’জনের আন্ডারস্ট্যানডিং দেখলে আমাদের ঈর্ষা হয়। তবে একটি মাত্র ফোন আমাদের দু’জনের ‘কঠিন’ আন্ডারস্ট্যানডিং এলোমেলো করে দেয়। অযাচিত এই ফোনটির এটোমিক পাওয়ার টুইন টাওয়ারের মতো গুড়িয়ে দেয় আমার সোনা বউয়ের বিশ্বাসের অট্টালিকা।
রাত প্রায় তিনটা। গভীর ঘুমের ঘোরে আচ্ছন্ন আমি। ওর ডাক এবং হাতের স্পর্শ পেয়ে চমকে উঠি। ‘দেখো তো অপরিচিত নাম্বার থেকে বার বার ফোন আসছে।’ কখনোই সে অপরিচিত নাম্বার রিসিভ করে না তাই আমাকে জাগিয়েছে। আত্মীয়-স্বজনের নাম্বার মনে করে কল ব্যাক করি। আমার মন শঙ্কিত ছিল এই ভেবে যে, আত্মীয়-স্বজন কেউ মারা গেছেন বা গুরুতর অসুস্থ হয়েছেন নচেৎ এতো রাতে ফোন আসার কথা না । একটি মেয়ে ফোনটি রিসিভ করে। তার কন্ঠ শুনে মনে হলো ক্লাস নাইন-টেনের ছাত্রী। শঙ্কিত কণ্ঠে জানতে চাইলাম, কে? সে উত্তর দিলো, ‘‘আপনার ঘুমের ডিস্টার্ব করার জন্য দুঃখিত।’’ বললাম, প্লিজ আপনার পরিচয় দিন। সে বললো, ‘‘সাহেব শুধু পরিচয় নয় আরো কিছু দিতে চাই!’’
মেজাজ চড়তে চড়তে সপ্তম আকাশে গিয়ে ঠেকেছে। চড়া গলায় বললাম, এতো রাতে ফোন করেছেন কেন? সে হাসতে হাসতে বললো, ‘‘আমার ইচ্ছে হলো তাই করলাম!’’ মন চাচ্ছিল এক থাপ্পরে ওর সবকয়টা দাত ফেলে দেই কিন্তু সম্ভব নয় বলে অসহায়ের মতো ফোন বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়ি। মোবাইল ফোন যখন ছিল না তখন ঠিকই সূর্য উদয়-অস্ত হয়েছে কিন্তু এখন এ যন্ত্রটি চালু না থাকলে সূর্য যেন নড়তে চায় না। বাধ্য হয়ে সকাল বেলা ফোনটি অন করি। মনে হলো মেয়েটি আমার ফোন অন করার অপেক্ষায় ছিল। হালকা পাতলা গালি দিয়ে লাইনটি কেটে দেই। কাছের কেউ রহস্য করছে ভেবে বাংলা সিনেমার খল নায়কদের মজাদার (!) গালি ইচ্ছে করেই দেই নি।
বেশ কিছু দিন হয়ে গেল কোনোভাবেই মেয়েটিকে থামানো যাচ্ছে না। এদিকে আমার ‘তিনি’ কিছুটা মুখ ভারি করা শুরু করেছে। একদিন কাকঢাকা ভোরে ফোনটি বেজে উঠে। পাশের মানুষটি ঘুমিয়ে আছে ভেবে মেয়েটির রসালো গল্পে রস ঢালতে শুরু করি। উদ্দেশ্য ছিল আরো ঘনিষ্ট হওয়ার ভান করে তার পরিচয় জানা। এক পর্যায়ে মেয়েটি বলে উঠে, ‘তোমার কি ইচ্ছে করে না আমার কুমারী দূর্গে হানা দিয়ে সবকিছু লুটে নিতে?’ মেয়েটির সম্বোধন এবং আবেদনে আমার আপাদমস্তক বিদ্যুৎতাড়িত হয়ে দুলে দুলে উঠে! মনে শঙ্কা জাগে তাহলে কি আমি কারো ট্রেপে পা দিচ্ছি? কিন্তু ওর যাদুময়ী কন্ঠ, মোহনীয় হাসি সাক্ষ্য দেয় না যে, সে পেশাদার . . .। শত চেষ্টা করেও তার পরিচয় নিতে পারি নি।
সকাল বেলা তাড়াহুড়ো করে অফিসে যাওয়ার দরুন জীবন সাথীর চেহারার দিকে ভালোভাবে তাকাইনি বা তাকানোর প্রয়োজনবোধ করি নি। কিন্তু রাতে বাসায় ফিরে বউয়ের মুখ দেখে আমার অন্তরাত্মা কেঁপে উঠে। এ কি দশা তার! জানতে চাইলাম, কি হয়েছে তোমার? কোনো রা নেই। মনে হলো সুপার গ্লু দিয়ে দু’ঠোঁট আটকিয়ে দেয়া হয়েছে। দুমড়ানো-মুচড়ানো চেহারা। উম্মাদ টাইফুনের ভয়াবহ অত্যাচারের পর উপকূলীয় অঞ্চলের যে দশা হয় সে দশা হয়েছে আমার বউয়ের! এভাবে চলে একটানা তিনদিন। আমাদের অফুরন্ত সুখ আর উচ্ছল হাসি ঢেকে যায় বিষাদের ছায়ায়। কোনো কিছুতেই মন বসে না। একজন মানুষের মুখ ভারীর কারণে আজ পুরো সংসারটাই একটা নরকে পরিণত হয়েছে। ছেলে মেয়েরাও হয়ে থাকে মন মরা।
তিন দিন পর গভীর রাতে অভিমানী বউয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে একটু আদুরে গলায় বললাম, কি হয়েছে তোমার? আমি এমন কি বেয়াদবি করলাম যে, নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে দিয়েছো? হতাশ এবং ভারাক্রান্ত গলায় বললাম, এতো অশান্তি আর ভালো লাগে না। স্বামীজির আদর পেয়ে বউ আমার ডুকরে কেঁদে উঠে! কাঁদতে কাঁদতে বললো, ‘সত্যি করে বলো তো মেয়েটির সাথে তোমার কি সম্পর্ক?’ আশ্চর্য হয়ে বললাম, কোন মেয়েটি? বউ রেগে বললো, ‘আহারে হুজুর আমার কিচ্ছু বুঝে না! কেন? যে মেয়েটির সাথে মোবাইলে প্রেম কর সেই মেয়েটি?’ হেসে বললাম আরে বেকুফ, ওর সাথে প্রেম করতে যাবো কেন? কণ্ঠের ঝাজ কিছুটা কমিয়ে বউ বললো, ‘কথা লুকানোর চেষ্টা করো না; তুমি কি মনে করছো সেদিন ভোরে তোমাদের প্রেমালাপ কিছুই শুনি নি?’
ভারি কণ্ঠে কৃত্রিম রাগ দেখিয়ে বললাম, প্রায় ১২ বছর ঘর সংসার করে আমার সম্পর্কে তোমার এই মূল্যায়ন? এই বিশ্বাস? শ্লেষাত্মক কণ্ঠে ‘পুরুষ মানুষকে আর বিশ্বাস! বলেই সে পাশ ফিরে ঘুমানোর ভান করে। বউকে শান্ত করার জন্য রবি ঠাকুরের দুর্বোধ কবিতার ‘কিছু আমি করিনি গোপন/যাহা আছে সব আছে তোমার আঁখির কাছে/প্রসারিত অবারিত মন/দিয়েছি সমস্ত মোর করিতে ধারনা/তাই মোরে বুঝিতে পার না? পক্তি কয়টি শুনিয়ে পাশের রোমে চলে যেতে যেতে ক্ষেদোক্তি করলাম, কোথাকার এক ‘নটি’র ফোনে যদি এক যুগের পথ চলা ছন্দ হারিয়ে ফেলে তাহলে এমন অনিশ্চয়তার পথে না চলাই ভালো। অনুযুগের স্বরে বললাম, আমি তো কোন দিন ওকে ফোন করিনি? সে ফোন করলে আমি শুধু পরিচয় জানার চেষ্টা করি।
মেয়েটি সাধারণত রাতের শেষাংশে ফোন করে। কিন্তু এবারই অনেক দিন বিরতির পর এক পড়ন্ত বিকেলে ফোন করলো। আমার হ্যালো শুনেই আশ্চর্য হয়ে বললো, ‘‘আচ্ছা তুমি কেমন মানুষ? নিজে থেকে আমাকে একদিনও ফোন করো না? আমাকে নিয়ে তোমার মনে কোনো আগ্রহ নেই? অন্য ছেলেরা পারে তো আমাকে কাঁচা খেয়ে ফেলে!’’ অবাক হয়ে প্রশ্ন করলাম, অন্য ছেলেদেরকেও ফোন করো নাকি? হৃদয়ে ঝড় তুলা সেই হাসি দিয়ে মেয়েটি বললো, ‘‘আরে একজনকে নাকি? কত ছেলের যে ঘুম হারাম করে দিয়েছি! এটি আমার নেশা। ফোনে মিথ্যা প্রেমাভিনয় করে ছেলেদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলি। আমাকে পাবার জন্য তারা যখন অস্থির হয়ে উঠে, কাতর হয়ে চটপট করতে থাকে তখন আমি সিম পরিবর্তন করে কেটে পড়ি। এভাবে ছেলেদেরকে প্রতারিত করে, কষ্ট দিয়ে আনন্দ পাই।’’
এটি তো একটি জঘন্য গর্হিত কাজ। এমন করো কেন? জানতে চাইলাম আমি। ‘‘কারণ ছাড়া তো আর আমি এমন করছি না। ঠিক না?’’ সে কারণটা কি আমি জানতে পারি? সে বললো, ‘‘হ্যা, ঘটনাটি তোমাকে বলা যায়। কারণ আমি তোমাকে নিয়ে . . .’’ কথা শেষ না করে থেমে যায়। বললাম, কী ব্যাপার থেমে গেলে যে? হালকা খাঁকারি দিয়ে সে বললো, ‘‘আমার ষষ্ট ইন্দ্রিয় বলছে তুমি ভালো মানুষ তাই তোমাকে বিশ্বাস করা যায়।’’ ঈষৎ বিরক্তির সাথে বললাম, আরে বাবা তুমি কি কারণে ছেলেদেরকে প্রতারিত করছো সেটা বলতে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের কথা আসছে কেন? সম্ভব হলে বলো নইলে লাইন কেটে দিলাম।
ব্যতিব্যস্ত হয়ে সে বললো, না না লাইন কেটো না, শোন বলছি, ‘‘তখন আমি এসএসসি পরীক্ষা দিবো। পরীক্ষার মাসখানেক পূর্বে স্কুলের একটি অনুষ্ঠানে গান গাই। সেদিন রাতে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির ছেলে সাজ্জাদ আম্মুর মোবাইলে ফোন করে আমাকে চায়। বিষয়টি আমি ভালোভাবে নেই নি। কিন্তু লক্ষ করলাম আম্মু মহাখুশী। আম্মুর ভাবখানা এমন যেন তিনি আকাশের চাঁদ হাতের মুঠোয় পেয়েছেন। আমার সাথে কৌশলাদি বিনিময়ের পর সে বললো, তোমার কন্ঠ তো ভারী মজা! এতো সুন্দর গাইতে পারো? আর তুমি নিজেও কিন্তু খুব সুন্দরী ইত্যাদি ইত্যাদি। কথা পৃষ্ঠে কথা না বলে আমি শুধু তার দোয়া চেয়ে আম্মুর কাছে মোবাইলটা দিয়ে দেই। আম্মু তাকে বাসায় আসার জন্য দাওয়াত দেন।
এরপর থেকে সে মাঝে মাঝে আমাদের বাসায় আসতো এবং বিভিন্ন উপলক্ষে আমাকে দামি দামি উপহার দিতো। ইতোমধ্যে আম্মুর লাইফ ইস্টাইলও পরিবর্তন হয়ে যায়। কেউ না জানলেও আমি জানি তার অর্থের উৎস কোথায়। বিষয়টি আমার বেসরকারী চাকুরীজীবী আব্বু ভালোভাবে নেন নি। এ নিয়ে আম্মুর সাথে আব্বুর প্রায়ই ঝগড়া হতো। তবে আম্মুর সাথে আব্বু পেরে উঠতেন না। এদিকে আম্মু পারে তো এখনই আমাকে সাজ্জাদের হাতে তুলে দেয়! আম্মুর যেন তর সয়ছিল না। সাজ্জাদ এ এলাকার সবচেয়ে বড়লোকের ছেলে। তাছাড়া সে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। আমাদের বিষয় সম্পত্তি না থাকলেও আম্মু আমার সৌন্দর্য নিয়ে যথেষ্ট সচেতন ছিলেন। আমার নয়নকারা রূপই ছিল আম্মুর আশার বাতি ঘর!
সাজ্জাদ বাসায় আসলে আমাদের দু’জনকে রেখে আম্মু বাইরে বেরিয়ে যেতেন। অনেকটা নিরাপদ অভিসারের সুযোগ করে দেওয়া আর কি! সে আমার সাথে নানান বিষয়ে গল্প করতো। সাত আসমান ভরা স্বপ্ন দেখাতো। সে বলতো তুমি এক আসাধারণ মেয়ে! কিন্তু আমি তো জানি আমি এক সাধারণ মেয়ে। ওদের পরিবারের কাছে আমি কিছুই না। কাতর হয়ে ভিখেরীর মতো প্রেম নিবেদন করতো। নির্জনতার সুযোগে মাঝে মাঝে মধ্য রাতের চোরের মতো সিঁধ কাটার চেষ্টা করতো। কখনো সুযোগ বুঝে প্রেম ভিখেরী থেকে ডাকাত সেজে আমার ‘কুমারী দূর্গে’ হানা দিয়ে অহংকার লুটে নেয়ার চেষ্টা করতো। কিন্ত আমি অনেক কষ্টে আগলে রেখেছি আমার অহংকার। আবেগে আপ্লুত হয়ে তার কাছে নিজেকে সঁপে দেয় নি।
সাজ্জাদের দেখানো স্বপ্নের ভেলায় চড়ে আমিও যে স্বপ্ন দেখিনি তা কিন্তু নয়। অবশেষে ‘সব হারিয়ে’ যাতে পস্তাতে না হয় সে জন্যে আমি একটু সতর্ক ছিলাম। শুধু একটি শব্দ ‘কবুল’ এর প্রতীক্ষায় প্রহর গুণেছি। কিন্তু দু’বছর পর সে যখন মহাসমারোহে আমাদের কলেজের এক স্যারের ডাক্তার মেয়েকে বিয়ে করলো তখন আমার চেয়ে আমার আম্মু বেশী কষ্ট পেলেন। মনোযাতনায় মুষড়ে পড়লেন। বিষন্ন আম্মু বিড়বিড় করে বলতো, ‘আমি নিজের হাতে আমার মেয়ের সর্বনাশ করলাম! খাল কেটে কুমির ডেকে এনেছিলাম! সে আমার পারুলকে এভাবে ধোঁকা দিতে পারলো? আম্মুর হাঁড়ি মুখ দেখে আমার হাসি আসতো। মনে মনে বলতাম ‘অতি আশা বাঘের বাসা’ বুঝ এবার মজা!’’
তন্ময় হয়ে মেয়েটির কথা শুনছিলাম। আমি লাইনে নেই ভেবে মেয়েটি হ্যালো বলে সংযোগ আছে কিনা যাচাই করে নিলো। আমার সাড়া পেয়ে বললো, ‘‘জানো আমরা মেয়েরা সহজেই ছেলেদেরকে বিশ্বাস করে ফেলি। এটা আমাদের দুর্বলতা। সাজ্জাদের বিয়ের পর আমি যখন স্বেচ্ছায় গৃহবন্দি হয়ে যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছি তখন আমার সহপাঠী ‘তমাল’ সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। কখন যে তার মায়ার জালে জড়িয়ে পড়ি তা টেরই পাইনি। তমালের ভালবাসা পেয়ে আমার মাঝে নতুন করে প্রাণের সঞ্চার হয়। আবারো রঙ্গিণ স্বপ্ন দেখতে শুরু করি। হোঁচট না খাওয়া পর্যন্ত আমি বুঝতেই পারি নি যে তমাল সাজ্জাদের চেয়েও ধূর্ত এবং চতুর!
এর পর থেকে ছেলেদের প্রতি আমি প্রতিশোধপরায়ন হয়ে উঠি এবং মোবাইলে প্রেমের মিথ্যা অভিনয় করে প্রতিশোধ নিতে শুরু করি। আজ অসময়ে তোমাকে ফোন করলাম একটি সুখবর দেওয়ার জন্য।’’ আমি বললাম, ভালো কথা, সুখবর দেয়া এবং শুনা দুটোই সুখের। এবার বলো তো তোমার সুখবরটা কি? সে খুশী হয়ে বললো, ‘‘জানো আমি ভয়ংকর এ নেশা ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ভাবছি আবারো পড়াশুনায় মন দিবো। জিদ করে, অভিমান করে জীবনটাকে নষ্ট করা চরম বোকামী। দিশেহারা-গতিহারা জীবনকে নতুনভাবে সাজাবো।’
ধন্যবাদ জানিয়ে বললাম, এটা তো একটা যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত! মেয়েটি সিরিয়াস হয়ে বললো, তুমি কি আমার সাথে মশকরা করছো? দ্রুত বললাম, না না মশকরা করবো কেন? আচ্ছা একটি কথা বলো তো তোমার এ সিদ্ধান্তের কথা আমাকে জানাচ্ছ কেন? কাতর স্বরে মেয়েটি বললো, ‘‘বিশ্বাস করো তোমাকে নিয়ে আমি স্বপ্ন দেখছি! তুমি সে দিন ভোরে বলেছিলে, ‘ম্যাইনে তুজকো দিল দিয়া হ্যায়, তুনে মুজকে কিয়া দিয়া/তেজী ছুরি হাত মে লে কার পারা পারা কর দিয়া।’ সেদিন তোমার ভাবাবেগ, মোহাড়ষ্ট কণ্ঠ শুনে মনে হলো সত্যিই তুমি আমাকে ভালোবাসো! আমি তোমাকে অন্য ছেলেদের মতো পরিচয় না দিয়ে। ধরা দেই দেই করে ধরা না দিয়ে কতো কষ্ট দিয়েছি। প্লিজ, তুমি কিছু মনে করো না।’’
অট্ট হাসি দিয়ে বললাম, আরে পাগলী আমি তো শুধু তোমার পরিচয় জানার জন্য তোমার সাথে প্রেমের অভিনয় করেছি। আমি বিবাহিত এবং পুত্র-কন্যা-জায়া সবই আছে আমার। তোমাকে আমি ভালোবাসতে যাবো কোন দুখে? আকস্মিক টর্নেডোর আঘাতে ডুবন্ত লঞ্চের যাত্রীর মতো চিৎকার করে মেয়েটি বলে উঠলো, ‘‘হায় আল্লাহ!!
No Comment to " গল্প - নেশা "