গল্প - এমনও দিনে তারে বলা যায়
শারমিন বাইরে বের হল।আজ পাঁচ দিন হল মামাবাড়িতে বেড়াতে এসেছে।বাসার সামনে সুন্দর একটা পার্ক।পার্কের বেঞ্চে বসে হাওয়া খেতে আর চারপাশের গাছপালা দেখতে তার ভালই লাগে।পার্কে ঢুকে দেখল প্রতিদিন যে বেঞ্চে বসে সেখানে একটা ছেলে বসে সিগারেট ফুঁকছে।এই জিনিসটাকে সে একদম সহ্য করতে পারে না।কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর কেমন যেন চেনা চেনা মনে হল।একটু এগিয়ে গিয়ে বুঝতে পারল ছেলেটা তাদের সেকশানের।নাম সম্ভবত আকাশ।
-এই,তুমি আমাদের সেকশানে না?
--হুম।
-একা বসে আছ কেন?
--এমনে।
-এটা আমার জায়গা।অন্য কোথাও যাও।
--দুই বছর ধরে এখানে বসছি।অন্য কাউকে বসতে দেই না,তেমন কেউ এদিকে আসেও না।তোমাকে কয়েকদিন বসতে দিয়েছি।এটা আমার।
বলে একরাশ ধোঁয়া ছাড়ল।মনে মনে চিন্তা করছে শারমিন কিরকম বেয়াদব ছেলেটা,অসভ্য আচরণ।তারপর অন্যদিকে যাওয়ার উপক্রম হল।
--এই মেয়ে শোনো
-কি?
--বসো
বলে সে উল্টোদিকে হাঁটা ধরল।শারমিন তাকিয়ে আছে।
বন্ধ শেষ।ক্লাস শুরু হয়ে গেছে।ক্লাসে শারমিন মাঝেমধ্যে আশিককে খুঁজে।বেশিরভাগ সময়ই সে ক্লাস করে না।অনেকে বলাবলি করে ইদানিং গাঁজা-টাজা ও খায় নাকি।একদম নষ্ট হয়ে গেছে।
একদিন ক্লাস শেষে বের হয়ে শারমিন দেখে ছেলেটা বাইরে দাড়িয়ে আছে।ক্লাসের সবাই ইতিমধ্যে চলে গেছে।চেহারার অবস্হা খারাপ।বিশাল বড় বড় চুল,দাড়ি গোফে একাকার অবস্হা।কয়দিন গোসল করে না কে জানে!ঘোলা চোখে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।
-এখানে দাড়িয়ে আছো কেন?
--এমনে।
-ক্লাস করো না কেন?
--ভাল্লাগে না।
-কিছু বলবে?
--না।
-বাসায় যাও।
শারমিন চলে গেল।এসব নষ্ট ছেলের সাথে কথা বলে সময় নষ্ট করার কোন মানে নেই।
একদিন শারমিন দেখল আশিক রাস্তায় একটা ছেলেকে বেদম মারছে।আশেপাশে মানুষকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারল ছেলেটা একটা মেয়েকে টিজ করেছিল তা আশিকের চোখে পড়ে যায়।এরপর সে ছেলেটার কলার চেপে ধরে টেনে এনে মারতে থাকে।এসবই পারে সে।ক্লাসে চলে গেল শারমিন।
আজ খুব বৃষ্টি হচ্ছে।শারমিনের বৃষ্টি খুব ভাল লাগে।মাকে অনেক কষ্টে রাজি করিয়ে ছাদে উঠল।ভিজবে,ভিজলে জ্বর আসবে,জ্বর গায়ে প্যারাসিটামল খেয়ে কাঁথামুড়ি দিয়ে ঘুমাবে।
কিছুক্ষণ ভিজার পর দেখল বাসার সামনে ছেলে একটা একা দাড়িয়ে আছে।আশেপাশে কেউ নেই।একটু ভালমত দেখে সে চিনতে পারল।সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসল।
-এখানে দাড়িয়ে ভিজছ কেন?
এমনি বলে আশিক বিপরীত দিকে হাঁটা ধরল।
-এই ছেলে দাড়াও।
এভাবে পালাচ্ছো কোথায়?
কিছু বলার সাহস নাই?
--নেশাখোরের হাতে ফুল শোভা পায় না,মুখ দিয়ে সুন্দর কথা বের হয় না।সাহস নাই কিছু বলার,বললেই তো সবশেষ।
-সাহস করে একবার বলেও তো দেখতে পারতে।
ভাল হয়ে যাবে?
--পারব না।
-আমার জন্য?
--চেষ্টা করব।
শারমিন তার হাত ধরে।কাঁধে মাথা রাখে।
-আমার জন্য একটা কদম ফুলের মালা এনে দেবে?
--হু দেব।
পাশাপাশি হেঁটে চলে তারা।বৃষ্টির মধ্যে যেন প্রস্ফুটিত দুটো কদম ফুল
No Comment to " গল্প - এমনও দিনে তারে বলা যায় "