News Ticker

Menu

একটি গাঁয়েহলুদ,একটি পুরনো পরিচয় ও কিছু কথা "গল্প"

আমি আসার পর থেকে বার তিনেক চোখাচোখি হল।আমার দিকে চোখ পড়তেই দৃষ্টি ফিরিয়ে নিল প্রতিবারই। কেয়ারফুল কেয়ারলেস ইগনোরেন্স।খুব মনোযোগ দিয়ে তাকিয়ে দেখলাম ওকে। নাহ বিয়েতে ওর মোটেও অমত নেই।কি সুন্দর হাসিখুশি চেহারা। কথায় কথায় হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে।হাসলে দুই গালেই টোল পড়ে। কতদিন এই দৃশ্য দেখার জন্য হা করে তাকিয়ে থেকে ওর কাছে ধরা খেয়েছি।হাসিহাসি মুখটা অদ্ভুত ভাবে আমার দিকে তাকাতো তখন।আমি সুন্দর এটা তো আমি জানিই,তাই বলে এভাবে সবসময় আমার দিকে তাকায় থাকবা?-ওর অদ্ভুত দৃষ্টির বঙ্গানুবাদ আমি পড়তে পারতাম।
এই মেয়েটারই কি বিয়ে হতে যাচ্ছে?এই মেয়েরই কি গাঁয়ে হলুদ হচ্ছে? চোখের সামনে দৃশ্যমান ঘটনাও অনেক সময় কাল্পনিক লাগে। বুকের বাম পাশটায় হালকা চাপ অনুভব করি।ম্যাজিক কার্পেট বা রোলার কোস্টার রাইডে উঠলে যখন দিগ্বিদিক জ্ঞান লোপ পায়,মৃত্যু চিন্তার একটা হালকা শিহরণে বুকে কাঁপন দিয়ে উঠে,আমার ঠিক সেরকম লাগে। সমস্ত পৃথিবীটা একটা কেন্দ্রে আবদ্ধ থেকে যেন ঘুরপাক খাচ্ছে।

তাকিয়ে তাকিয়ে হলুদ দেওয়া দেখছি।আশেপাশে অনেক চেনাজানা বন্ধুবান্ধব আত্মীয়স্বজন এর ভিড়।বের হয়ে যাবো কিনা চিন্তা করতেছি। পিছন থেকে নারীকণ্ঠে কেও বলে উঠলো – আরে মিরাজ না এইটা?
ফিরে তাকালাম কণ্ঠ লক্ষ্য করে।সিলভি আমার দিকেই তাকিয়ে আছে।প্রথমে ডাকটা বেশ জোরেই দিয়েছিলো।যখন দেখলো আরও কয়েকজন ফিরে তাকিয়েছে,তখন আস্তে করে বললো-চল ছাঁদে যাই,যা ভিড়!
আমার ছাঁদে যাওয়ার মন মানসিকতা নাই। মেয়েটা সিলভি,অন্য কেও না।তাই ওর পিছু নিলাম।
-কি খবর কেমন আছো?
-এইতো আছি ... তোমার টিচিং কেমন চলে?
-ভালো। শুনলাম তুমি নাকি স্কলারশিপ পাইছো? সত্যি?
- হ্যা। নেক্সট মাসে ফ্লাইট।
-ওয়াও,কনগ্রেটস!!
খবরটায় ওর যতটুকু খুশি হওয়ার কথা,ঠিক তততুকু খুশি দেখতে পারলাম না ওর চেহারায়। মেয়েটা আমাকে এখনো পছন্দ করে জানি। কি জানি হয়তো অন্য কেও সে জায়গা দখল করেছে। করতেই পারে। এই মেয়ে তো আর সারাজীবন আমার জন্য বসে থাকবে না।
-কি ব্যাপার, খবরটায় মনে হয় খুশী হও নাই?
-না,না... তা না। আমি আসলে বিশ্বাস করতেই পারতেছি না,তুমি সত্যি সত্যি চলে যাবা বাইরে।
-হ্যা যাবো। এমন সুযোগ মিস করা কি ঠিক?
-নাহ,যাওয়াই উচিত।
প্রসঙ্গ পরিবর্তন করে বললাম
- তোমার বান্ধবী তো বিয়ে শাদী করে ফেলতেছে। তোমার বিয়ে কবে খাবো? তাড়াতাড়ি করলে আমার জন্য সুবিধা। বিয়েটা খেয়ে যাইতে পারি।
-আসলে তোমাকে এখানে আশা করি নাই। দেখে চমকে গেছিলাম প্রথম।রুপা কে তুমি কি পরিমাণ পছন্দ করো,আর কেও না জানলেও তো আমি জানি। আর আমার বিয়ে? তুমি আগেও খারাপ ছিলা এখনো খারাপই আছো ।নাহলে এই প্রশ্নটা অন্তত আমাকে করতা না!
-বিয়ে এখন না করো,কয়দিন পর তো ঠিকই করবা! কি করবা না?
-উত্তরটা কি তোমার কাছে নাই? তুমি রুপাকে পছন্দ করছো,ওকে!আমাকে রিজেকক্ট করছো,ওকে! এখন আমার বিয়ে খাইতে চাও??
-আচ্ছা বাদ দাও এইসব কথাবার্তা। আঙ্কেল আনটি কেমন আছে?
-ভালোই আছে। আম্মুর প্রেশারটা আবার বাড়ছে। আব্বু নর্মাল।
-উনাদেরকে আমার সালাম দিও।
-দিবো। বাসায় তো আসতে পারো মাঝেমধ্যে! আমি নাহয় পর,আমাকে দেখতে পারো না আমি জানি। উনাদের জন্য তো অন্তত আসতে পারো।
-তুমি পর কে বলছে? আসলে সময় হয় না ঠিক ... ...
-আমি আপন? হাহাহাহাহা... সময়ের অজুহাত দেওয়া লাগবে না ।
দেখতে দেখতে আমার ইউএসএ যাওয়ার দিন এসে পড়লো।রাতে ফ্লাইট।সবার কাছ থেকে ফোনেই বিদায়পর্ব সেরে নিচ্ছিলাম।সিলভির কথা মনে পড়তেই মনে হল ওদের বাসায় যাওয়া উচিত ছিল। একে তো আমরা ফ্যামিলিফ্রেন্ড,দ্বিতীয়ত ওর মা আমার টিচার ছিলেন। বাসাও একদম কাছে।
ওদের বাসায় যখন গেলাম তখন বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা। সিলভি বাসায় ছিল না।আঙ্কেল আনটি আদর যত্নের চূড়ান্ত করলেন। আঙ্কেল কথায় কথায় বললেন- বিয়েটা করে যাওয়া উচিত ছিল না? কবে না কবে দেশে আসবা?
আমি বললাম- দেখি,সময় তো আছে...
কথা বলতে বলতে সিলভি এসে পড়লো। রাতেই আমার ফ্লাইট শুনে আমার দিকে এমন ভাবে তাকালো যেন আমি কোন রসিকতা করেছি। বিদায় নেওয়ার সময় সিলভি বলল-আমি সি অফ করতে আসি?
-কি দরকার! কষ্ট হবে খালি খালি...
-কষ্ট হবে না। নাকি তুমি চাও না?...
- না, আসো। সমস্যা নাই।
এয়ারপোর্টে আসার পুরোটা পথ কি যেন গভীর মনোযোগে লিখলো সিলভি। একবার জিজ্ঞেস করলাম –কি লিখো?
- লাভলেটার, সংক্ষিপ্ত উত্তর।
অবাক হয়ে মেয়েটাকে দেখলাম। নাহ কোন অস্বাভাবিকতা নেই,স্বাভাবিক আছে। ইমিগ্রেশনে ঢুকার আগে একটা গিফটবক্স আরএকটা খাম আমার হাতে ধড়িয়ে দিলো।
-প্লেন ছাড়ার পর খামটা খুলবা। ঠিকাছে?
-ঠিকাছে।
-তোমার হাতটা দাও।
হাত এগিয়ে দিলাম। খুব যত্ন করে হাতটা ধরে রাখলো বেশকিছুক্ষণ। সিলভির চোখে পানি। আমারও কষ্ট হতে লাগলো একটু একটু। হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে পানি মুছলো। তারপর একটা কথাও না বলে ঘুরে চলে গেলো।
খামটা সাইডপকেটে রেখে দিলাম। ভিতরে কি আছে পড়ার তুমুল আগ্রহ। ইমিগ্রেশনের ঝামেলা শেষে বসে বসে বোর হচ্ছিলাম। খামের কথা মনে পড়তেই হাতে নিলাম। এখন পড়া আর প্লেনে পড়া একই কথা। খুলে ফেললাম খামটা। গোটা গোটা অক্ষরে একটা চিঠি লিখা,সম্বোধন ছাড়া। সাত-আট লাইন বা তারচেয়ে কিছু বেশি হবে।
- “ তুমি যখন চিঠিটা পড়বা,তখন আমি ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে যাবো। শুধু এটুকু জেনে রেখো,তুমি রুপাকে যতোটুক ভালোবাসছিলা আমার ভালোবাসা তোমার জন্য তারচেয়ে কম না,তারচেয়ে অনেক বেশি। ছেলেরা কঠিন হৃদয়ের হয় জানি,কতটা কঠিন হতে পারে,তোমাকে না দেখলে আমি বুঝতাম না। সবাই যদি তোমার মত হতে পারতো! তোমার ভালোবাসা আরেকজনের কাছে চলে গেছেও জেনে তুমি কি নির্বিকার,শান্ত ছিলা!আমার ভালোবাসা কোনদিন আমার কাছে আসবে না জেনে আমি কেন শান্ত হতে পারি না? জানো,তোমার পাশে অন্য কাওকে আমি একদম সহ্য করতে পারি না। তাই রুপার বিয়ের খবরে একটু খুশী হয়েছিলাম। হওয়া উচিত না, তাও হয়েছিলাম। কি করবো! বল? সবাই তো তোমার মত মহান না। ভালো থেকো। অনেক ভালো। আর এমন কাওকে ভালবেসো যে তোমাকেও ভালোবাসবে”
চিঠিটা পকেটে ঢুকিয়ে রাখলাম। ‘ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে যাবো’কথাটা ঘুরপাক খাচ্ছে মাথায়। উল্টাপাল্টা কিছু করবে না তো ও? ফোন দিলাম সাথে সাথেই। নাম্বার বন্ধ। টেনশনে মাথার চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে হল।
ঘড়িতে রাত ১০ টা ১০ ফ্লাইট আরও ৩ ঘণ্টা পর। তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম। এই ফ্লাইট না ধরতে পারলেও সমস্যা নাই।জীবনের ফ্লাইটটা একটু অদল বদল করে নেওয়া দরকার। সময় এখনো কিছু আছে হাতে...

Share This:

Oneem Khan

I'm ONEEM. A full time web designer. I enjoy to make modern template. I love create Wordpress template and write about web design, blogger. Now I'm working with WordPress, Cpanel, Blogspot etc. You can contact me to create your own website at www.oneemkhan.blogspot.com and also visit : www.TroyMama.com

No Comment to " একটি গাঁয়েহলুদ,একটি পুরনো পরিচয় ও কিছু কথা "গল্প" "

  • To add an Emoticons Show Icons
  • To add code Use [pre]code here[/pre]
  • To add an Image Use [img]IMAGE-URL-HERE[/img]
  • To add Youtube video just paste a video link like http://www.youtube.com/watch?v=0x_gnfpL3RM