News Ticker

Menu

গল্পু : পুতুল মা !!

আজ ক্লাসে কিছুতেই মন বসাতে পারছেনা কুশিয়ারা ।চতুর্থ শ্রেণী পড়ুয়া পিচ্চি মেয়েটির চোখে মুখে দারুন উত্কদন্ঠা কারোরই চোখ এড়ায়না ।বাংলা ক্লাসে ওকে অমনোযোগি দেখে স্যারকাছে ডেকে জানতে চাইলেন কি হয়েছে ওর? এমনতো কখনোই হয়না,আজকের পড়াটাও বলতে পারেনি সে। বরাবরই প্রথম হওয়া কুশিয়ারার মুখে শুনা গেলো ওর মনখারাপের কারণ। মায়ের খুব শরীর খারাপ। বাড়িতে আজ বাবাও নেই। স্যার শুনেই ওদের দুবোনকে ছুটি দিয়ে দিলেন ।ওর ছোট বোন মেঘনা একই স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ে।


ওর বাবা ছোটখাটো সাহিত্যিক সামিউর রহমান বেশ কিছুদিন হলো ঢাকায় দৌড়াদৌড়ি করছেন ।একটা জাতীয় পত্রিকায় তার কয়েকটা কবিতা গল্প ছাপা হলে তার মাথায় ভুত ছাপে কবিতার বই বের করার। এই জন্যই প্রকাশকদের দরবারে দেন দরবার করতে ঢাকায় ছোটাছুটি।


স্থানীয় হাই স্কুলের মাস্টার সামিউর রহমান সংসারের প্রতি অনেকটা উদাসীন হলেও মেয়ে দুটোকে প্রাণ দিয়ে ভালবাসেন। অনেক শখ করেই দু'মেয়ের নাম রেখেছেন কুশিয়ারা আর মেঘনা। খুব ইচ্ছে একটা ছেলে হবে এইবার ,নামটাও ঠিক করা হিমালয়। বউ অবশ্য প্রতিবারই আপত্তি করে বলেছে কিসব আজগুবি নাম রাখো ,মানুষ শুনলে হাসে। নদীর নাম ছেড়ে এইবার আসছো পর্বতে !!

অভাবের সংসারে সারাদিনই খিটখিটে মেজাজ থাকে তার। মেয়ে দুটোও তার রাগ থেকে রেহাই পায়না।সামনে যেটা পান সেটাই ছুড়ে মারেন ।অবশ্য একটু পর আবার কাছে ডেকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকেন তিনজনে গলাগলি করে ।
বাড়িতে এসে দেখে মা ব্যাথায় ছটফট করছেন, বইখাতা ছুড়ে ফেলে মায়ের পাশে বসে কুশি,মেঘনা বোনের হাতে বই দিয়ে খেলতে চলে গেছে। ছোট মানুষ,কতটা আর বুঝে? কুশি ছোট হলেও বড়বোন সুলভ একটা মায়া মায়া ভাবগাম্ভীর্য্য এসে গেছে এই বয়সেই। ছোট থেকেই মা প্রায়ই অসুস্থ থাকেন বলেই হয়তো ।তাও সুযোগ পেলেই শিশুসুলভ মানসিকতা মাথা ছাড়া দিয়ে উঠে,সিমুর সাথে চলে পুতুল বিয়ের আয়োজন ।ও পুতুলদের মমতাময়ী মা,কত আদর যত্ন ওদের,কত কান্নাকাটি বিয়েতে।

মাকে চোখ মেলে তাকাতে দেখে খুশি হয়ে জানতে চায় অহন একটু ভালোলাগতাছেনি মা? মা মাথা নাড়িয়ে বলে না, যা তোর খালারে ডাইকা নিয়া আয়। ভাত খাইছিস?মিনা কই গেছে ?খেলতে গ্যাছেগা? এই মাইয়াটার জ্বালায় আর বাঁচিনা। সারাদিন পইড়া থাহে খেলা লইয়া। একটু কথা বলেই হাঁপিয়ে উঠে পানি খেতে চান রেহানা বেগম। মনে মনে রাজ্যের গালি দিতে থাকেন সংসারের বোকা মানুষটাকে। এইসময় কেউ বউকে পিচ্চি দুটো মেয়ের কাছে রেখে যায়? অভিজ্ঞতা বলছে সময় হয়ে এসেছে বাচ্চা প্রসবের। একটা ছেলে চাই তার,বোকা উদাসীন মানুষটাকে সংসারে ফেরাতে তার একজন হিমালয়ের খুব বেশি প্রয়োজন।

সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসতে খুব বেশি দেরি নেই,সামিউর রহমান ঘামে একাকার হয়ে প্রচন্ড ভীড়ে ঝুলতে ঝুলতে একেকজন প্রকাশকের কাছে যাচ্ছেন পান্ডুলিপি নিয়ে। তার খুব স্বপ্ন তার হিমালয়ের জন্মক্ষণে এই সুখবরটা দিবেন সবাইকে।
কেউ রাজী নয় বইটা প্রকাশ করতে,গতবার একজন বলেছিলো বেশ কিছু টাকা লাগবে। জমানো টাকাটা নিয়েই এসেছেন এবার।

প্রকাশকের হাতে পান্ডুলিপিটা দিয়ে পকেটে হাত দিতেই আঁতকে উঠলেন তিনি ।হাতটা পুরোটা ঢুকে গেল কাটা পকেটের ভেতর দিয়ে!নেই টাকাটা!
সামিউর রহমানের অবস্থা দেখে প্রকাশক বিদ্রুপের একটা হাসি দিয়ে পান্ডুলিপিটা বাড়িয়ে দিলেন ।কাঁপা হাতে ওটা নিয়ে বেরিয়ে গেলেন মাথা নিচু করে, কোনকথা না বলেই।

ফেরার পথে ব্রীজে দাঁড়িয়ে একটা একটা পাতা না ছিঁড়ে নদীর জলে ভাসিয়ে দিলেন! নদীর নোংরা স্রোত তার স্বপ্নগুলো ভাসিয়ে নিয়ে গেলো বহুদুর।
শেষ রাতে বাড়ি ফিরে এসে দেখলেন মৃত প্রায় স্ত্রীকে ঘিরে হতবাক বসে আছে ধাত্রী রহিমা ।পাশে কুন্ডুলি পাকিয়ে ঘুমাচ্ছে মেঘনা, আর ঘুমঘুম চোখে সদ্য প্রসুত মেয়েটাকে কোলে নিয়ে বসে আছে কুশিয়ারা।
নাহ্ ,নিঃস্ব সামিউর পারেননি ফিরিয়ে আনতে অভিমানী স্ত্রীটাকে ।নিজেকে কিছুতেই ক্ষমা করতে পারেননি বাকি জীবন, মিছে মরীচিকার পিছনে ছুটে তার সত্যিকারে স্বপ্নমাখা ঘরটা বিরান হয়ে গেলো বলে। এতদিনে বুঝলেন তার মত মধ্যবিত্ত পরিবারে কবি হতে চাওয়াটা বিলাসিতা মাত্র। অনেকে চেষ্টা করেও আরেকটা বিয়ে করাতে রাজী করাতে পারেনি তাকে।

স্ত্রীকে হারিয়ে অনেকটাই সংসারের প্রতি মনোযোগি হয়ে উঠলেন তিনি। ছেলে না হলেও ছোট্ট পুতুল মেয়েটার নাম তিনি হিমালয় ই রাখলেন। সংসারের টুকটাক কাজ করতে পারলেও হিমাকে কিছুতেই সামলাতে পারেননা তিনি। চিত্কাার করে কাঁদতে থাকা ছোট্ট পরিটাকে নিয়ে বড্ড অসহায় বোধ করেন তিনি। কুশিয়ার আসে যেন ত্রাণকর্তা হয়ে,অবাক হয়ে দেখেন ও কোলে নিতেই শান্ত হয়ে যায় হিমা। চুকচুক করে কুশিয়ার হাতে কি যেন একটা তরল খাওয়ার খায়। আর মিটিমিটি হাসে হাত পা নাড়িয়ে। পুতুল বিয়ে দেয়া পুতুলদের মমতাময়ী ছোট্ট পুতুল মা এইবার যেন সত্যি মা হয়ে উঠলো জীবন্ত এক ছোট্ট পুতুলের।

Share This:

Oneem Khan

I'm ONEEM. A full time web designer. I enjoy to make modern template. I love create Wordpress template and write about web design, blogger. Now I'm working with WordPress, Cpanel, Blogspot etc. You can contact me to create your own website at www.oneemkhan.blogspot.com and also visit : www.TroyMama.com

No Comment to " গল্পু : পুতুল মা !! "

  • To add an Emoticons Show Icons
  • To add code Use [pre]code here[/pre]
  • To add an Image Use [img]IMAGE-URL-HERE[/img]
  • To add Youtube video just paste a video link like http://www.youtube.com/watch?v=0x_gnfpL3RM