গল্প : ভালবেসে নাম দেওয়া
থাপড়ায় দাঁত উল্টায় দিব মেয়ে ,কতবার বলেছি আমার রুমে ঢুকবে না ।
- আমি কি করব , কেরামত পাঠালো ।
- কেরামত পাঠালো না ! দ্বারাও ও’র কেরামতি বার করতেছি । তুমি এখনও যাও নাই,বেরোও !!!!!!
- স্যার চা টা ।
-হ্যাইত(ধমক) তোর চা বের হ . . . . .. . .পিন্টু সাহেব ।
মাঝারি গরন ,খোঁচা খোঁচা দাড়ি ,এক কালচে । তবে দেখতে সুন্দর ।এনাকে রাগী বলা যায় আবার যায় না । যায় না এই কারনে যে তিনি শুধু মেয়েদের দেখতে পারেন না । তার চোখের বিষ এই মেয়েরা । কাজে অত্যন্ত নিষ্ঠ কিন্তু কোন মেয়েকে সামনে পেলে অফিসের বারোটা বাজায় তারপর ছাড়েন । কাজে দক্ষ এবং মনযোগী বলেই তার চাকরীটা আছে ,তা না হলে কবেই চলে যেত । সবাই বিষয়টা মোটামুটি জানে কিন্তু তবুও কেরামত আর লিপি মিলে ওনাকে মাঝে মাঝেই ক্ষ্যাপাইয় আর মজা নেয়।
# একদিন কথায় কথায় মেয়ে বিষয়টা উঠে আসে । সাথে সাথেই রেগে যান তিনি । আমাকে সাফ জানিয়ে দেন এরকম মেয়ে প্রসঙ্গ তুললে তিনি আর আমার সাথে দুপুরে খেতে আসবেননা । কিন্তু কি মনে করে তিনি সেদিন একে একে বলে গেলেন তার ছেলেবেলার কথা ,তার বেড়ে ওঠার কথা । বলে গেলেন কিভাবে তিনি বড় হয়েছেন,কখনো ক্ষোভে কখনো দু:খ
>জানেন মুজিব ভাই , আমি তখন ছোট্ট । সবে একটি একটু বুঝতে শিখেছি। বাবা আসলেন আর বললেন -ঐ খেলতে গেছিলি ক্যান ? তোকে না খেলতে যাইতে নিষধ করেছি । আমি বলেছিলাম আমি যেতে চাইনি পাশের বাসার পিয়াস আমাকে জোড় করে নিয়ে গেছে । কিন্তু ব্যাটা আমার কথা শুনে নাই , বিশ্বাস করে নাই । থাপড়াইছিল অনেক কয়েকটা । এরকম যুক্তিহীনভাবে প্রায়ই আমাকে মারত। আমি শুধু কাঁদতাম । কাউকে বলার
উপায় ছিল না । কারণ আমার আপন বলে কেউ ছিল না ।
> কিন্তু এতে তো আপনার বাবার প্রতি আপনার রাগ করার কথা । তাহলে আপনি নারী বিদ্বেষী . . . . .
কথা কেড়ে নিয়ে পিন্টু সাহেব অভিযোগের সুরে বললেন - মা যদি আমাকে জন্ম দিয়ে মরে না যেত তাহলে আমাকে এত কষ্ট সহ্য করতে হত না । আমাকে প্রতিদিন মার খেতে হত না ।
> কিন্তু আপনার মা বেঁচে থাকলে ঠিক আপনাকে আদর স্নেহ করত ।
> ওই আদর স্নেহ করার ভয়েই তো মরছে
> কি বলেন পিন্টু সাহেব !!! কেউ কি ইচ্ছা করে মরে ?? আর মরে গিয়ে ওনার লাভকি ,বলেন ???
> আছে ভাই আছে লাভ আছে । শোনেন নাই , সন্তান জন্ম দেয়ার সময় মরলে সাথ সাথ বেহেশ্ত । ভাই বেহেস্তের লোভ কি আর সবাই সামলাইতে পারে । ইনিও পারে নাই । স্বার্থপর ভাই স্বার্থপর !!!!
হা হা হা : হাসাইলেন ভাই ।
# ভাই ভাত নেবেন আর ।
> না আর না । এগুলাই ঢুকতেছে না । আপনি নিতে পারেন ,আমি নেব না ।
চাচা এক প্লেট ভাত দেন । আর পারলে কয়েকটা মরিচ আনিয়েন
> মুজিব ভাই ,আর একটা কথা আপনি বললেন না যে বেঁচে থাকলে তিনি আদর করতেন কি করতেন না । কেন জানেন ??
>কেন ?????
> আপনি কি মনে করেন না যে পৃথিবীর সব মা এক ।
> অবশ্যই । এনারা উদার হোন ।
> তাহলে শুনেন আমি কিভাবে বুঝলাম উনি বেঁচে থাকলেও আদর করতেন না । জানেন আমার বাবার আর একটা বউ ছিল । আমার মা মারা যাওয়ার পর বিয়ে করেছিল বাবা । আমি খুব সাহায্য করতাম প্রথম প্রথম ওনাকে । কিন্তু
উনি আমাকে খেতে দিতে চাইতো না । দিলেও পঁচা বাসি খাবারগুলান দিত । বাবা মারার সময় আরো মারো আরো মারো বলে চিৎক চেঁচামেচি করত । তো এই হল মা । এনাকে দেখেই বুঝা যায় উনি কেমন হতেন ,বুঝছেন ভাই।
# আচ্ছা বুঝলাম আপনি মা জাতিটাকে ঘৃণা করেন । কিন্তু তাই বলে সব মেয়েদের আপনি ঘৃণা করবেন . . . .
>( কথা কেড়ে নিয়ে ) হ্যাঁ করব । কারণ মেয়ে জাতটাই এমন । এরা শুধু কথা বলতে জানে . . . . . . পট পট। নোংরা সব নোংরা । ওই কে জানি বলছে না - পৃথিবীতে একটা নোংরা জাতি থাকলেঠিক বলছে । ওনারে সাহিত্যে নোবেল দেয়া দরকার ( কাকে যে নোবেল দেয় )
> আপনি যাই বলেন পিন্টু ভাই আমি আপনার সাথে সহমত পোষন করতে পারলাম না । আপনি সাইকোলজিষ্টকে দেখান ।আপনার বিশেষ থ্যারাপি নেয়া প্রয়োজন ।
> আমার দরকার নাই । এই মা জাতটার থ্যারাপি দরকার । সব পাগল । কেউ বিয়া করে সন্তান স্বামী রেখে পালায় কেউ বিয়া না করে সন্তান জন্ম দেয় । কেউ আবার বিয়ে করে অন্যজনের সাথে পরকিয়া করে ।
> যাই বলেন ভাই । আপনার সব কথা ভুল না হলেও অধিকাংশ ভুল । আপনি অভিমানে কিংবা ক্ষোভে এসব বলেন । দেখবেন একদিন এই মেয়ে জাতটাই আপনাকে নতুন করে বাঁচতে শেখাবে । আপনার সবচেয়ে প্রিয় মানুষ হয়ে উঠবে ।
> আরে ছাড়েন । মেয়ে মেয়ে করিয়েন না । দেরি হচ্ছে লাঞ্চ টাইম শেষ চলেন তাড়াতাড়ি যাই . . . . .
# সেদিন ছিল রোব বার । অন্যান্য দিনের মত সেদিনও মেয়ে জাতটাকে গালি দিতে দিতে বিছান পিন্টু সাহেব । কিন্তু আজএকটু তাড়াহুড়ো করেই বেরাতে হবে কারণ আজ অফিসে মিটিং আছে । মিটিং করতে হবে , তাড়াতাড়ি যেতে হবে এই কথা ভেবে রিক্সায় না গিয়ে বাসে যাওয়ার স্বীদ্ধান্ত নিয়েছিল পিন্টু সাহেব । সাদা শার্ট সাথে কালো প্যান্ট আর লাল টাইয়ে মারাত্মক লাগছিল সেদিন । হঠাৎ পিন্টু সাহেব দেখতে পান তার অফিসের এক মেয়ে এদিক আসছে । রাগে জ্বলে উঠে পিন্টু । এই মেয়ের বাসা এপাশে জানলে জীবনে এদিক বাসের আশায় বসত না পিন্টু। পিন্টু তৎক্ষনাৎ স্বীদ্ধান্ত নিল যে সে ট্যাক্সিতে করে যাবে । পিন্টু উঠে দাঁড়িয়েছে ঠিক সে সময় যাত্রী ছাউনিতে একটা চলন্ত ট্রাক নিয়ন্ত্রন হারিয়ে যাত্রী ছাউনীতে ঢুকে পড়ে । মুহুর্তেই বাস স্ট্যান্ড পরিণত হয় মৃত্যু কুপে । মাটিতে লুটিয়ে পড়েন পিন্টু । জ্ঞান হারানোর আগে শুধু চোখের সামনে দেখতে পান একটা মেয়ের মুখের ঝাপসা অবয়ব । বিরক্তি নিয়েই অজ্ঞান হয়ে পরেন পিন্টু . . . . . .
# তারপরের কাহিনী আমরা সবাই জানি । আপনারাও শুনুন পিন্টু সাহেবের মুখ থেকেই . . .
>হঠাৎ চোখে মেলে দেখি আমি হাসপাতালে । পা নাড়ানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হই । আস্তে আস্তে মনে পড়তে থাকে সব কথা। মনে পড়ে যায় ঝাপসা একটা মেয়েলি চেহারার কথা । আমি বিরক্ত হই । এমন সময় ডাক্তার এসে বলেন আপনাকে যার জন্য বাঁচানো সম্ভব হয়েছে তিনি আপনার সাথে দেখা করতে চান ?
আপনি অনুমতি দিলে . . . . অবশ্যই অবশ্যই ।
হাতে ফুলের তোড়া নিয়ে ঢুকে অবনী । আমি অবাক হই সেদিন , রাগ কিংবা বিরক্ত নয় । আমি ঠিক
বুঝতে পারি এই অবনীই সেদিন আমাকে হাসপাতালে এনেছিল । আমি তাকে ধন্যবাদ জানাই । সে ও
অবাক হয় আমার ধন্যবাদ পেয়ে । খুশিতে কেঁদে ফেলে মেয়েটা । তারপর হুর হুর করে ভিতরে ঢুকে সব
কলিগরা আমাকে শুভেচ্ছা জানায় নতুন জীবনের জন্য । মেয়ে কলিগরা সব খুশি হন এই ভেবে তাদের আর কেউ ঝারবে না । আসলে পাঠক জানেন অপি আমাকে আগে থেকেই ভালবাসত ,কিন্তু কাউকে কখনও বলে নি । বিয়ের পর বলেছে । আগে জন্মদিন ছিল না আমার,এখন আছে ( জানতাম না কবে ) আমি ওই রবিবারের দিনটাকেই আমার জন্মদিন হিসেবে পালন করি।
আমি অবনীকে অপি বলে ডাকি সেও ডাকে ।অবনীর অ পিন্টুর পি এই
মিলে অপি । অনেক সুখে আছি । এখন আর কারো প্রতি ক্ষোভ নাই । মায়ের কবর যাই প্রায়ই । কারণ এখন
বুঝি মায়েরা কেন সন্তান নেন । নিজের সন্তানকে আমি মারি না শুধু আদর করি স্নেহ করি । পাঠক এত সব সুখ পেয়েছি আমি শুধু এই মেয়ে জাতটার কারণে । তাই আমার প্রিয় মানুষের তালিকায় এখন একজন মেয়ে । মুজিব সাহেবের সেদিনের কথাটা অক্ষরে অক্ষরে মিলে গেছে . . তোমার কাছে চিরকৃতজ্ঞ আমি অপি । । ভালবাসি তোমায়
অনেক অনেক . . .
No Comment to " গল্প : ভালবেসে নাম দেওয়া "