গল্প নই সত্যি : বাংলাদেশের গর্বের গার্মেন্ট শিল্প
গত ৩৫ বছরে বাংলাদেশের গার্মেন্ট শিল্প যতটা সুনাম অর্জন করেছে, দুর্নামও তার চেয়ে কম করেনি। নিম্নমানের শ্রম পরিবেশ ও শ্রমিক শোষণের পাশাপাশি স্পেকট্রাম, তাজরীন, রানা প্লাজা দুর্ঘটনা 'মেড ইন বাংলাদেশ' লেবেলকে বিশ্ববাজারে পরিণত করেছে 'রক্তে ভেজা' লেবেলে। সবশেষে 'জাতীয় লজ্জা' হয়ে দাঁড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের জিএসপি স্থগিতের ঘটনা। তার পরও সর্বোচ্চ রপ্তানি আয়ের এই খাতে লুকিয়ে আছে এমন সব গল্প, যা সত্যিই গর্বের। এসব গল্প ইউরোপ-আমেরিকার সংবাদপত্রে লেখা হয় না। এমনই কিছু গল্প আজ তুলে ধরা হলো। প্রতিবেদনগুলো তৈরি করেছেন রাজীব আহমেদশুরু ১৯৭৮ সালে। ওই বছর ফ্রান্সে ১০ হাজার শার্ট রপ্তানি করে বাংলাদেশ পেয়েছিল ১৩ মিলিয়ন ফ্রাঁ। এর পরের ইতিহাস শুধু সামনে এগোনোর। সাড়ে তিন দশকে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত বছরে ২০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়ের শিল্পে পরিণত হয়েছে। পরিধেয় পোশাকে 'মেড ইন বাংলাদেশ' লেখা দেখে এ দেশের সঙ্গে পরিচিত হয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী দেশগুলোর নাগরিকরা।
দেশের গর্ব এই গার্মেন্ট খাতে বহু উদ্যোক্তা আছেন যাঁরা শ্রমিকদের কল্যাণ, কারখানার মান ও মালিক হিসেবে দায়বদ্ধতার দিক দিয়ে অনন্য নজির গড়েছেন। ডিবিএল, ফকির অ্যাপারেলস, ব্যাবিলন, ভিয়েল্লাটেক্স, ইপিলিয়ন, অ্যাবা গ্রুপসহ আরো অনেক গ্রুপের নাম করা যায়, যাদের কারখানাগুলো কোনো দিক দিয়েই আমেরিকা বা ইউরোপের কারখানার মানের চেয়ে কম নয়। কিন্তু কানাডার কোনো দোকানের সামনে যখন 'এখানে বাংলাদেশে তৈরি পোশাক বিক্রি হয় না' লেখা পোস্টার ঝোলে, তখন প্রশ্ন ওঠে গোটা বাংলাদেশকে নিয়েই। গুটিকয়েক মুনাফালোভী নষ্ট উদ্যোক্তার জন্য আর তাঁদের রক্ষার জন্য ব্যবসায়ীদের সবচেয়ে বড় সংগঠন বিজিএমইএর চেষ্টার কারণে এ দেশের কয়েক হাজার উদ্যোক্তা ও ৩৫ লাখ শ্রমিকের গত ৩০ বছরের অর্জন এখন হুমকির মুখে।
তবে কলকারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তর ও ফায়ার সার্ভিসের জরিপের তথ্য তুলে ধরে বিজিএমইএর সহসভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম কালের কণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশের প্রায় ৬০ শতাংশ কারখানা 'এ' গ্রেডের, যার সংখ্যা দুই হাজার ৬০টি। আর 'বি' গ্রেডের কারখানার সংখ্যা ৫০০ থেকে ৬০০। প্রায় ৮০০টি কারখানা 'সি' গ্রেডের।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশের পোশাক কারখানা বিভিন্ন বিদেশি সংস্থা দিয়ে নিরীক্ষা করিয়ে দেখে যে কারখানাগুলো ঠিকভাবে মান রক্ষা করছে কি না। র্যাপ নামে পরিচিত মার্কিন সংস্থা ডাব্লিউআরএপি মার্কিন মান অনুসারে নিরীক্ষা করে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাদের কাছে র্যাপের সনদ গ্রহণযোগ্য হয়। এভাবে ইউরোপীয়দের কাছে বিএসসিআইয়ের নিরীক্ষা গ্রহণযোগ্য। ইউরোপের প্রায় ৭০০ ক্রেতা প্রতিষ্ঠান বিএসসিআইয়ের সদস্য। তবে যুক্তরাজ্যের ক্রেতারা অনুসরণ করে এথিক্যাল ট্রেড ইনিশিয়েটিভ ড্রেস কোড। এসব সনদ পাওয়া কারখানাগুলোকে মানের দিক দিয়ে আন্তর্জাতিক মানের বলা যায়। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক খুচরা বিক্রেতারা বাংলাদেশে তাদের কার্যালয় খুলে তার মাধ্যমে নিজস্ব নিরীক্ষক নিয়োগ করে কারখানায় তাদের পণ্যের অর্ডার দেয়। যেসব ব্র্যান্ডের নিজস্ব কার্যালয় নেই, তারা এসজিএস, আইটিএস, ইউএল, ব্যুরো ভেরিতাস, ডিএনভিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা দিয়ে নিরীক্ষা করায়। এ ছাড়া এফএলও, আইএসও, ইউএসজিবিসির লিডসহ বিভিন্ন ধরনের মান সনদের ব্যবস্থা আছে।
বিজিএমইএর সহসভাপতি রিয়াজ বিন মাহমুদ জানান, বাংলাদেশের প্রায় ২৬০টি কারখানা র্যাপ সনদপ্রাপ্ত। প্রায় এক হাজার কারখানা বিএসসিআই নিরীক্ষিত। প্রায় ২০০ কারখানা আছে যেগুলো সেডেক্স নিরীক্ষিত। তিনি বলেন, মান রক্ষা করা হয় বলেই কারখানাগুলো অর্ডার পাচ্ছে। বিভিন্ন ক্রেতা প্রতিষ্ঠান নানাভাবে নিরীক্ষা করার পরই অর্ডার দেয়। তাদের চাহিদা অনুযায়ী মান রক্ষা না করলে অর্ডার মিলত না।
যে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পণ্যের অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা (জিএসপি) স্থগিত করল, তাদেরই ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিলের (ইউএসজিবিসি) পরিবেশগত মানের দিক দিয়ে দেওয়া 'লিড' সনদ পাওয়া বিশ্বসেরা গার্মেন্ট কারখানাটি আছে বাংলাদেশেই। পৃথিবীতে মাত্র তিনটি পোশাক কারখানা 'লিড' সনদের 'প্লাটিনাম' মর্যাদা পেয়েছে, যার দুটি শ্রীলঙ্কায়, একটি বাংলাদেশের ঈশ্বরদী রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকায় (ইপিজেড), একজন বাংলাদেশি উদ্যোক্তার মালিকানায়। এটির নাম ভিনটেজ ডেনিম স্টুডিও লিমিটেড (ভিডিএস)। এই কারখানা ১১০ নম্বরের মধ্যে ৯০ নম্বর পেয়ে লিড সনদ পেয়েছে। পৃথিবীর অন্য কোনো পোশাক কারখানা এত বেশি নম্বর কখনো পায়নি।
বাংলাদেশের ভিয়েল্লাটেক্স গ্রুপ ইউনাইটেড ন্যাশনস ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের গ্রিন ইন্ডাস্ট্রি ইনিশিয়েটিভের অ্যাডভাইজরি বোর্ডের সদস্য। ওই বোর্ডে মাইক্রোসফটসহ বিশ্বের মোট চারটি কম্পানি আছে।
এ ছাড়া অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যারা আন্তর্জাতিক মানের শ্রমিককল্যাণের দিক দিয়ে নজির গড়েছে। নীরবে তারা পণ্য তৈরি করছে, রপ্তানি করছে। কোনো ধরনের সংবাদমাধ্যম বা প্রচারের আলোয় আসার কোনো চেষ্টাও তাদের নেই। সম্প্রতি জার্মান উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জিআইজেড বাংলাদেশের ভালো পোশাক কারখানাগুলোকে বেশ কয়েকটি খাতে পুরস্কার দিয়েছে। তবে ওই প্রতিযোগিতায় পুরস্কার নিশ্চিত করার মতো অনেক কারখানাই অংশ নেয়নি। আবার একটি ক্যাটাগরিতে একটি কারখানাকে পুরস্কার দেওয়ায় অন্য অনেক ভালো কারখানা বাদ পড়েছে।
জিআইজেড থেকে এবং কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে বাংলাদেশের ভালো কারখানাগুলো সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য মিলেছে। এসব কারখানা শ্রম আইনের বাইরেও শ্রমিকদের নানা সুবিধা দিয়ে থাকে। শতভাগ কমপ্লায়েন্ট এসব কারখানা ভবনের নিরাপত্তা ও পরিবেশ রক্ষায় মেনে চলে উঁচু মান। জিআইজেড তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে নিরীক্ষা করিয়ে কারখানাগুলো সত্যিকারভাবে শ্রম আইনের বাইরে ওই সব সুবিধা দেয় কি না, তা নিশ্চিত হয়েছে।
ডিবিএল গ্রুপ বাংলাদেশের পোশাক খাতে শীর্ষস্থানীয় একটি প্রতিষ্ঠান। পরিবেশ ও কারখানার কর্মপরিবেশের নিরাপত্তার পাশাপাশি শ্রমিকদের কল্যাণেও নজির গড়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ২০০৮ সালে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার পর থেকে প্রতিষ্ঠানটি জিন্নাত নিটওয়্যার নামের কারখানার প্রাঙ্গণে 'বন্ধন' নামের একটি ন্যায্যমূল্যের দোকান খুলে কারখানার শ্রমিকদের জন্য বাজারদরের চেয়ে কম দামে পণ্য বিক্রি শুরু করে। কারখানা প্রাঙ্গণে অবস্থিত ওই দোকান থেকে শ্রমিকরা ২৪০ ধরনের পণ্য কম দামে কিনতে পারে। শ্রমিকদের জন্য একটি হিসাব খোলা হয়। তারা যত দামের পণ্য কেনে, তা বেতনের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়। এভাবে শ্রমিকরা বাকিতে পণ্য কেনারও সুযোগ পায়।
শ্রম আইন অনুযায়ী সব সুবিধা দেওয়ার পাশাপাশি শ্রমিকদের চিকিৎসা সুবিধাও দেয় ডিবিএল গ্রুপ। কারখানার সব কর্মীকে হেলথ কার্ড নিতে হয়। কারখানাটির নিজস্ব হেলথ কেয়ার সেন্টার রয়েছে, যেখানে রোগ পরীক্ষা ও ছোট অপারেশনের সুবিধাও রয়েছে। ডিবিএল গ্রুপের কারখানায় বছরে শ্রমিকদের ১০০ জন সন্তানকে শিক্ষা সহায়তা দেওয়া হয়। ঈদের সময় শ্রমিকদের জন্য শাড়ি ও লুঙ্গি দেওয়া হয়। কোনো শ্রমিকের সন্তান হলে তাকে ১১ আইটেমের উপহারের একটি বক্স দেওয়া হয়। মজুরি কাঠামোর চেয়ে বেশি হারে মজুরি দেওয়া হয় ওই প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের।
ফকির অ্যাপারেলস লিমিটেডও বেশি হারে মজুরি দেয়। বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের মজুরির স্তর পাঁচ হাজার টাকা। কারখানাটির একটি শ্রমিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আছে। সেখানে প্রশিক্ষিত শ্রমিকদের শিক্ষানবিশকালে দুই হাজার ৫০০ টাকার বদলে তিন হাজার টাকা মজুরি দেওয়া হয়। শ্রম আইনে বোনাসের কোনো কথা নেই। কিন্তু পোশাক খাতে মূল বেতনের সমান বোনাস দেওয়া হয়। আর ফকির অ্যাপারেলস বোনাস হিসেবে দেয় মোট বেতন। তাও দুই ঈদেই।
ফকির অ্যাপারেলসে প্রতিবছর সেরা শ্রমিকদের বাছাই করে পুরস্কার দেওয়ার রেওয়াজ আছে। গেল বছর তারা সেরা শ্রমিকদের ১৫টি ২১ ইঞ্চি রঙিন টেলিভিশন, ২২০টি নকিয়া ব্র্যান্ডের মোবাইল ফোনসেট ও প্রাইজ বন্ড দিয়েছে। বিশেষ দিন বা রমজানে শ্রমিকদের বিশেষ খাবার দেওয়ার পেছনে ফকির অ্যাপারেলস এক কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয় করেছে গত বছর। এ ছাড়া শ্রমিকদের রোজায় ইফতার ভাতা দেওয়া হয়, যার পেছনে ব্যয় হয় দেড় কোটি টাকা। কারখানার মালিকপক্ষ তাদের গাজীপুরের খামারবাড়িতে উৎপাদিত দুধসহ বিভিন্ন অর্গানিক পণ্য প্রতি সপ্তাহে দুই দিন বিক্রি করে। এ ক্ষেত্রে দাম রাখা হয় বাজারদরের চেয়ে কম। এ ছাড়া শ্রমিকদের বিয়ে উপলক্ষে উপহার, বড় রোগের চিকিৎসা অনুদান, সন্তানদের শিক্ষা সহায়তা ও হজে পাঠানোর ব্যবস্থা আছে ফকির অ্যাপারেলসে।
শ্রমিকদের স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিয়ে বিশেষ একটি কাজ করেছে ব্যাবিলন গ্রুপ, যেটি অন্য কোনো কারখানা করেনি। তারা নারী শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য তাদের ভর্তুকি মূল্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন সরবরাহ করে। প্রতি প্যাকেট ন্যাপকিন বাজারে কিনতে গেলে লাগে ৫৬ টাকা। ব্যাবিলন তাদের কারখানায় উৎপাদিত ন্যাপকিন বিক্রি করে ৩০ টাকায়। এখানে কোনো মুনাফা করা হয় না। শিক্ষা, বিয়ে ছাড়াও নানা উপলক্ষে শ্রমিক ও তাদের পরিবারকে সহায়তা দিয়ে থাকে ব্যাবিলন। শ্রমিক ও স্থানীয় মানুষের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য মেডিক্যাল সার্ভিস চালু করেছে ব্যাবিলন, যেখানে শ্রমিক ও সাধারণ মানুষ কম খরচে চিকিৎসকের পরামর্শ, এক্স-রে, আলট্রাসনোগ্রামসহ বিভিন্ন পরীক্ষা করার সুযোগ পেয়ে থাকে। সাধারণ মানুষ ও শ্রমিকদের সন্তানদের বৃত্তির ব্যবস্থাও আছে।
ভিয়েল্লাটেক্স গ্রুপের শ্রমিকদের খাবার পানি প্রত্যেক ছয় মাস অন্তর পরীক্ষা করা হয় আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইসিডিডিআর,বির মাধ্যমে। কারখানার স্যানিটেশন ব্যবস্থার মান রক্ষা করা হয় আইএসওর মান অনুযায়ী। শ্রমিকদের জন্য সার্বক্ষণিক চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে। সন্তানদের বুকের দুধ পান করানো মায়েদের পুষ্টির জন্য দুই হাজার টাকা করে বাড়তি দেওয়া হয়। শ্রমিকদের পাঁচ বছরের কম বয়সী সন্তানদের তিন মাস পর পর দেওয়া হয় চিকিৎসা সুবিধা। এ ছাড়া দুটি মেডিক্যাল সেন্টারে ৩০ শতাংশ কম খরচে চিকিৎসা মেলে শ্রমিকদের। দেশের প্রাইভেট লিমিটেড কম্পানিগুলোর মধ্যে প্রথমবারের মতো নিবন্ধিত প্রভিডেন্ট ফান্ডের ব্যবস্থা করা হয়েছে এখানে। প্রতিবছর কারখানার মুনাফা থেকে শ্রমিকদের উপহার হিসেবে বিশেষ অর্থ দেওয়া হয়।
শ্রম আইন মেনে শ্রমিকদের সব সুবিধা দেওয়ার পাশাপাশি নিজস্ব ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে শ্রমিক, তাদের সন্তান ও সমাজের বিভিন্ন মানুষের জন্য বিভিন্ন ধরনের সেবার ব্যবস্থা করে ইপিলিয়ন গ্রুপ। তাদের বিশেষ কাজগুলোর মধ্যে একটি হলো শ্রমিকদের সন্তান ও অন্যান্য মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান। শ্রমিকদের সন্তানদের কেউ পরীক্ষায় ভালো করলে তাকে আট হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত বৃত্তি দেওয়া হয়। পিএসসি ও জেএসসি পর্যায়ে বৃত্তির অঙ্ক আট হাজার টাকা, এসএসসি পর্যায়ে ১০ হাজার টাকা এবং এইচএসসি পর্যায়ে ১২ হাজার টাকা। ২০১২-১৩ অর্থবছরে কারখানাটি ১৪৫ জনকে ১৩ লাখ ৪৪ হাজার টাকার বৃত্তি দিয়েছে। শ্রমিকদের পরিবহন সুবিধা, স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্তদের সহায়তা করে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। শ্রমিকদের বেতনও বেশি, ন্যূনতম মজুরি তিন হাজার ৫০০ টাকা।
শ্রম আইনে থাকলেও বছরে কারখানার মুনাফার ৫ শতাংশ শ্রমিকদের দেওয়ার নিয়মটি মানা হয় না দেশের বেশির ভাগ কারখানায়। কিন্তু নর্দান গ্রুপ, কলম্বিয়া গার্মেন্টসহ অনেক কারখানায় আছে মুনাফা ভাগাভাগির ব্যবস্থা। নর্দান গ্রুপে শ্রমিকদের মুনাফার অংশ দেওয়া হয় ১৯৯৫ সাল থেকেই। প্রতিবছর কারখানায় যে মুনাফা হয় তার ৫ শতাংশ আলাদা করা হয়। ওই ৫ শতাংশে যে টাকা হয় তার ৮০ শতাংশ শ্রমিকদের মধ্যে নগদ বিতরণ করা হয়। বাকি ২০ শতাংশ রাখা হয় তাদের জন্য কল্যাণ তহবিলে।
এপিক গ্রুপের কারখানা এপিক গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারিংয়ে ন্যূনতম মজুরি তিন হাজার ১২৬ টাকা। কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের দুপুর ও রাতে বিনা মূল্যে খাবার দিয়ে থাকে। মাসে ৬০০ টাকা পরিবহন ভাতা, দৈনিক ৩০-৪০ টাকা উৎপাদন প্রণোদনা, এক হাজার টাকার উৎসব উপহার, জন্মদিনের উপহার ইত্যাদি সুবিধাও আছে।
ইন্টারস্টফ অ্যাপারেলস শারীরিক প্রতিবন্ধীদের সাভারের সিআরপির (পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্র) মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দিয়ে কারখানায় নিয়োগ দেয়। প্রশিক্ষণের পুরো ব্যয় বহন করা হয় কারখানাটির পক্ষ থেকে। এ পর্যন্ত ৫০ জন প্রতিবন্ধীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে কারখানায় নিয়োগ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। রমজান ও কোরবানির ঈদে শ্রমিকদের জন্য কম দামে পণ্য কেনার ব্যবস্থা আছে। তেল, চিনি, ডাল ইত্যাদি কয়েকটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের প্যাকেট করে ভর্তুকি মূল্যে বিক্রির ব্যবস্থা করে কারখানা কর্তৃপক্ষ। সামাজিক উন্নয়নেও ভূমিকা আছে ওই কারখানার মালিকদের। মুন্সীগঞ্জে ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে স্থানীয় জনগণের জন্য একটি উচ্চ বিদ্যালয় নির্মাণ করে দিয়েছে ইন্টারস্টফ। বিদ্যালয়টি চালুর পর কারখানার পক্ষ থেকে প্রতি মাসে ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হয় শিক্ষকদের বেতন তহবিলে। উত্তরবঙ্গে একটি ক্রিকেট একাডেমী তৈরির জন্য ৪০ লাখ টাকা দেওয়ার পাশাপাশি ওই কারখানার পক্ষ থেকে নিয়মিত আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয় সেখানে।
উৎপাদনে প্রণোদনা দেওয়ার জন্য হাজিরা বোনাস, উৎপাদন লক্ষ্য পূরণ হলে বছর শেষে বোনাস, দুপুরে ও সকালে খাবার, শ্রমিকদের জন্য পরিবহন ভাতাসহ শ্রম আইনের বাইরে নানা সুবিধা বহু পোশাক কারখানায় আছে। নর্দান গ্রুপে প্রতি সপ্তাহে কাজের পারফরম্যান্স মূল্যায়ন করে শ্রমিকদের নগদ অর্থ দেওয়া হয়। আবার বছর শেষে উৎপাদনশীলতা ও রপ্তানির লক্ষ্য পূরণ হলে বাড়তি এক মাসের বেতন দেওয়া হয়। লক্ষ্যের ৮০ শতাংশ পূরণ হলে বাড়তি অর্ধেক বেতন দেওয়া হয়।
কলম্বিয়া গার্মেন্টের মালিক প্রতিষ্ঠান এম অ্যান্ড জে গ্রুপের কারখানার শ্রমিকদের বা তাদের নিকট আত্মীয়দের কোনো বড় রোগ হলে কারখানার পক্ষ থেকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। সম্প্রতি এক শ্রমিকের শিশু সন্তানের হৃৎপিণ্ডের ফুটো রোগের চিকিৎসা হয়েছে মালিকের খরচে।
প্রাইড গ্রুপের ফ্যাশন নিট গার্মেন্ট লিমিটেডে একজন শ্রমিক তিন বছর কাজ করার পর একটি বিশেষ আর্থিক সহায়তা পায়।
এ ছাড়া স্কয়ার ফ্যাশনস্, ওয়েল গ্রুপ, কেডিএস, প্যাসিফিক জিনস্, ক্লিফটন গ্রুপ, ফোর এইচ গ্রুপ, ভ্যালিয়েন্ট গ্রুপ, চয়েস গ্রুপ, মণ্ডল গ্রুপ, এশিয়ান গ্রুপ, ক্রনি গ্রুপ, স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপ, এসকিউ গ্রুপ, জেকে গ্রুপ, বেক্সিমকো, ইস্ট ওয়েস্ট ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক, জায়ান্ট গ্রুপ, কুমুদিনি গার্মেন্ট, নিউ এজ গ্রুপ, রবিনটেক্স, সায়হাম নিট কম্পোজিট, নাসা গ্রুপ, রাইজিং গ্রুপ, ইসলাম গ্রুপ, স্টারলিং গ্রুপ, তুসুকা গ্রুপ, এনভয় গ্রুপ, সেপাল গ্রুপ, ইভিন্স গ্রুপসহ বহু গার্মেন্ট ব্যবসায়ী শিল্পগোষ্ঠীর নাম করা যায় যেগুলো বাংলাদেশের পোশাক খাতে ভালো কারখানা গড়ে তোলার উজ্জ্বল নজির। [সুত্র : কালের কণ্ঠ]
আসলেই অসাধারণ।। ধন্যবাদ এই কাজের জন্য
ReplyDeleteআপনাকে এই পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
Delete