গল্প : পুতুল পুতুল মেয়েটা
এই মেয়ে এখানে কী?
-স্লামালাইকুম আংকেল। এটা কী পাভেলদের বাড়ি?
না এটা আমার বাড়ি!
-আপনার বাড়িতে পাভেল থাকে?
গতকাল ছিল, আজকে নেই।
-আংকেল উনি কি এখন সেন্ট্রাল জেলে আছেন?
মাহবুব সাহেবের মেজাজ কিছুটা ঠান্ডা হয়ে আসে। মেয়েটা একদম তার মনের কথা বলেছে। তার বড় ছেলের নাম পাভেল। ছেলে বললে ভুল হবে। পাভেল একটা গরু ছাগল। নামীদামী প্রাইভেট ভার্সিটিতে কাড়ি কাড়ি টাকা খরচ করে এম বি এ পাশ করেছে। সিজিপিএ দুর্দান্ত। এ ছেলের অন্যান্য বিষয়েও মাথা ভালো। মানুষকে অবাক করে দেয়ার যথেষ্ট ক্ষমতা রাখে। গিটার বাজিয়ে গান গাইতে পারে। তার অফিসের পার্টিতে গান গেয়ে একপাল বেলাজা মহিলা ভক্ত জুটিয়েছিল। ভাগ্যদোষে সেইসব মহিলাদের ভাবী বলে ডাকতে হয়। কলিগ বন্ধুদের বাসায় গেলে ঢং করে। মাহবুব ভাই আপনার বড় ছেলেটাকে সাথে করে আনলেননা কেন! হি ইজ সো কুল!
তার যথেষ্ট বয়স হয়েছে। মেয়েদের মুখে ছেলের প্রশংসা শুনলে ভালো লাগে। কুল বাবার ছেলে কুল হবে এটাই নিয়ম। তবে ছেলেটা কুল থেকে কুলাঙ্গার হয়ে গেছে। নেশা ধরেছে। আজব রকমের নেশা। সে নাকি ট্যাবলেট পুড়িয়ে খায়। এতদিন জেনে এসেছেন ট্যাবলেট হলো গিলে খাওয়ার জিনিস। এ ট্যাবলেটকে ছেলেপেলে বাবা ডাকে। পাভেল প্রথম ধরা খাওয়ার দিন রাগে বেশি কিছু বলতে পারেননি। শুধু ট্যাবলেট বিষয়ক টুকটাক আলাপ হয়েছে।
- তুই কি এটাকে বাবা ডাকিস?
না।
-কী ডাকিস?
রাতজাগা ল্যাম্পপোস্ট।
তোর লজ্জা করেনা?
-করে। তবে ভালো লাগে। ভালো লাগার পরিমাণ বেশি। যেদিন কমে যাবে ছেড়ে দিবো।
মাহবুব সাহেব ভেবেছিলেন ছেলে অতিদ্রুত এই নেশা ছেড়ে দিবে। এর আগেও এমন হয়েছে। তবে এবার তার ভালো লাগা এখনো কমছেনা। রাতজাগা ল্যাম্পপোস্ট খেয়ে সারারাত গান গায়। অদ্ভুত সে গান। ছেলেকে তিনি কিছু বলতে পারেননা। যারা টাকার কোন হিশাব রাখেনা তাদের ছেলেপেলে বাদের খাতায় নাম লেখায়। পাভেল বাদের খাতায় নাম লেখানোর মত ছেলে না। যথেষ্ট ম্যাচিউর্ড। নিজের ভালো বুঝে। সেই ছেলেকে সেন্ট্রাল জেলে ভরে রাখার হুমকি দিতে হচ্ছে আজকাল। যদিও তিনি জানেন জেলে যাওয়ার কথা শুনলে ছেলে তার দিকে তাকিয়ে হাসে। কেন হাসে এটাও তিনি জানেন। তবু রেগে গেলে জেল ছাড়া আরো কোন স্থানের নাম তার মাথায় আসেনা।
পাভেল বাড়িতে নেই। তুমি কে?
-আমি ওর গার্লফ্রেন্ড!
তোমার বয়ফ্রেন্ডের খবর রাখার আমি কে? কী এমন প্রেম কর যে খোঁজ খবর জানোনা।
-লিসেন আংকেল আমরা প্রেম করিনা, উই আর জাস্ট গুড ফ্রেন্ডস। নাথিং এলস! এন্ড ইউ আর সো ফানি উইত ইওর সেন্ট্রাল জেল! লল!
লল বলার পর মেয়েটা বিচিত্র ভঙ্গিতে হাসছে। মনে হচ্ছে কেও তাকে চাবি মেরে হাসাচ্ছে। একটা সুন্দরী, স্মার্ট মেয়ে এমন হবে কেন! তার হাসিতে রাস্তাঘাটে পাভেলের উস্টা খাওয়ার কথা, রিকশা থেকে পড়ে যাওয়ার কথা, রাতে জ্বর আসার কথা, কাওকে কিছু না জালিয়ে পালিয়ে বিয়ে করার কথা। অথচ এসবের কিছুই নেই মেয়েটার ভেতর। একটা বিদেশী পুতুল। ভুলে বাংলাদেশে জন্ম নিয়েছে। বাংলাদেশে থাকা বিদেশী পুতুল নাকি পাভেলের গার্লফ্রেন্ড।
পাভেলের জন্য মাহবুব সাহেবের মায়া লাগছে। যার ভেতর আবেগ নেই তার জন্য পাভেলের কোন টান থাকার কথা না। টানছাড়া প্রেমিকরা ট্যাবলেট পুড়িয়ে খেতে পারে। মদের বোতলে দুই চুমুক মেরেই এরা কান্নাকাটি করবেনা। কান্নাকাটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া। এরা সবকিছু রেডিমেড চায়। এদিকে না পেলে ওদিকে খুঁজে, ওদিকে না পেলে ঐদিকে খুঁজে। দিক এর দিশা না পেয়ে গুগলে সার্চ মারে। সার্চ মেরে প্রেম হয়না, প্রেমের জন্য ডুবুরী হতে হয়।
পুতুল পুতুল মেয়েটা ফিরে যাচ্ছে। তার চালচলনে কোথাও কোন সমুদ্র নেই।।
No Comment to " গল্প : পুতুল পুতুল মেয়েটা "